দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিদায়ি চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুদক এখন আর নখদন্তহীন বাঘ নয়। স্মরণ করা যেতে পারে, দুদকের এক সাবেক চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটিকে নখদন্তহীন বাঘের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

এখন দেখার বিষয়, সেই অবস্থা থেকে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, কিংবা আদৌ উন্নতি হয়েছে কিনা। বিদায়ি চেয়ারম্যানের পাঁচ বছরের মেয়াদে দুদকের সাফল্য-ব্যর্থতার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক খতিয়ে দেখা যায়-দুদকের ফাঁদ টিমের কার্যক্রম অনেক দুর্নীতিবাজকে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে ফাঁদ কার্যক্রম সুনামও অর্জন করেছিল বেশ। তবে দুর্ভাগ্যজনক, এ সুনামকে পুঁজি করে দুদকের কোনো কোনো কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছিলেন।

দুদকের ব্যর্থতার বিষয়ে একটি বড় অভিযোগ হলো, প্রতিষ্ঠানটি কিছু ছোট দুর্নীতিবাজকে ধরতে সক্ষম হলেও বড় দুর্নীতিবাজরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। উদাহরণস্বরূপ, বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দুদক নিতে পারেনি কোনো ব্যবস্থা। এসব অপারগতার বিষয়ে অবশ্য দুদকের নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে।

তবে বাস্তবতা হল, প্রভাবশালীদের প্রতি অথবা ক্ষমতাবানদের অনুগ্রহভাজনদের প্রতি দুদক আইনের আপন গতির চর্চা খুব কমই লক্ষ করেছি আমরা। তবে এটি ঠিক, দুর্নীতির অভিযোগে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দুদক কার্যালয়ে যেতে হয়েছে, যেটিকে বিদায়ি চেয়ারম্যান সফলতা বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, দুদক এমন একটি বার্তা দিতে পেরেছে যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।

সর্বব্যাপী দুর্নীতির এ দেশে দুর্নীতি রোধে দুদকের জোরালো ও কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে জনগণ। সে প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি? প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি দমনে দুদক যে এখনো জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি, সে কথা বিদায়ি চেয়ারম্যানের বক্তব্যেই উঠে এসেছে। তিনি স্বীকার করেছেন, ‘জনগণের আকাঙ্ক্ষা আমরা পূরণ করতে পারিনি।

জনগণের আস্থা অনুযায়ী কিছুই করতে পারিনি।’ বস্তুত জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে দুদককে বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুদকের ক্ষমতার আওতা বাড়ানো হয়েছে। দুদক এখন তদন্ত বা অনুসন্ধানের জন্য আয়কর বিভাগ এবং ব্যাংকগুলো থেকে ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য সরাসরি তলব করতে পারে।

গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধান না করেই সরাসরি মামলা করতে পারে। আইন ও বিধি সংশোধন করে থানায় না গিয়ে নিজস্ব কার্যালয়ে মামলা করার ক্ষমতা পেয়েছে দুদক। এসব এখতিয়ার প্রয়োগে দুদককে প্রভাবশালীদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয় পেলে চলবে না, সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে।

বিদায়ি চেয়ারম্যান বলেছেন, দুদকে মামলার তদন্ত করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীর অভাব রয়েছে। কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। দুদকে আরও জনবল দরকার। আমরা মনে করি, দুদকের এ দুর্বল দিকগুলোয় সরকারের অবিলম্বে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। অধিক জনসংখ্যার এ দেশে জনবল ঘাটতি কোনো অজুহাত হতে পারে না।

দুর্নীতির কারণে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি। এ অবস্থার পরিবর্তনে দুদকের জনবল কাঠামো শক্তিশালী করা জরুরি। আমরা চাই দুর্নীতিবাজদের জন্য দুদক একটি ‘হিংস্র বাঘে’ পরিণত হোক, যাতে মানুষ দুর্নীতি করার সাহস আর না পায়।